,

৩ কোটি টাকার সড়ক নির্মাণে অনিয়ম! ঠিকাদার বললেন ‘ভুলে’

জেলা প্রতিনিধি, পাবনা: পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর বাজার থেকে পুস্তিগাছা বাজার পর্যন্ত নির্মিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ওই সড়কটিতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের সত্যতা স্বীকার করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী। সরেজমিনে গিয়েও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) আটঘরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার রাস্তার কাজ পেয়েছে শরীয়তপুরের এমএস শেখ এন্টারপ্রাইজ। তবে কাজ বাস্তবায়ন করছে পাবনার নাইস কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, ‘মাটি কাটা, বালি ভরাট ও খোয়া বিছানোর সময় আমাদের কাছে অভিযোগ করেন স্থানীয় সচেতন মহল। অভিযোগ পেয়ে নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের সত্যতা পাওয়া গেছে। পরে সেগুলো অপসারণ করা হয়।’

নাইস কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী আলহাজ্ব ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান সব সময় ভালোমানের কাজ করে। ভাটা থেকে ভুলে খারাপ ইট গিয়েছিল। অভিযোগ পাওয়ার পর সেটা তুলে ভালো ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছে।’

রাস্তা নির্মাণকাজের শ্রমিক সর্দার আল আমিন বলেন, ‘নিম্নমানের ইটের খোয়া দেওয়া হয়েছিল। পরে ইঞ্জিনিয়াররা এসে ওই খোয়া তুলে দিয়েছে।’

স্থানীয় ভ্যানচালক মোতালেব হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন, অটোচালক আব্দুস সালামসহ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আমরা এই পথ দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করি। যাতায়াতের সময় দেখেছি সর্বোচ্চ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কাজের সাথে এলজিইডির কতিপয় অসৎ কর্মকর্তারা জড়িত বলে মনে হচ্ছে।

রাস্তার পাশে একাধিক জমির মালিক বলেন, ‘বাইরে থেকে মাটি এনে নির্মাণকাজে ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় রাস্তার পাশের কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তায় ব্যবহার করছেন।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত ঠিকাদার এই কাজ করলে কখনো খারাপ করার সুযোগ পেত না। এমনিতে রাস্তায় ব্যবহৃত পুরনো নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। তারপর আবার যদি অতি নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার হয় তাহলে এই সড়ক টেকসই হবে না।

কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ না করে অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করাতে পারেন কিনা এমন বিষয় জানতে প্রশ্ন করা হলে এর সঠিক জবাব দিতে পারেননি উপজেলা প্রকৌশলী মেহেদী হাসান। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক দেখভাল করছি যাতে কাজটি ভালোমানের হয়। গেল ডিসেম্বরে এই কাজ শুরু হয়েছে। আগামী মার্চ মাসে এই কাজ শেষ করার মেয়াদ রয়েছে।’

আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমি নিজেও ওই সড়কটিতে গিয়ে নিম্নমানের কাজের সত্যতা পেয়েছি। ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারসহ কাজের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের ভালোমানের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছি।’

এই বিভাগের আরও খবর